আর দশটা স্বাভাবিক ছাত্রীর মতই ছিল তার চলাফেরা। তবে সুন্দরী হওয়াটাই যেন তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। এলাকায় বখাটেদের চোখ এড়ায়নি ওই ছাত্রী। একের পর এক প্রেমের প্রস্তাবে কাজ না হওয়ায় তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। আটকে রাখা হয়েছে ৩ দিন। তবে সতীত্ব হারিয়েও রক্ষা হয়নি তার। এবার তাকে পতিতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাবাকে বানানো হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী। যদিও তাদের নামে থানায় এসংক্রান্ত কোন মামলা নেই। স্রেফ ধর্ষণের বিচার থেকে বাঁতেই এমন অভিনব পন্থা হাতে নেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীর এখন কলেজে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গেছে। সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাই এখন দায় হয়েছে তার। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। প্রভাবশালী মহলের চাপে খোদ ইউপি চেয়ারম্যান ওই কলেজ ছাত্রীকে পতিতা তকমা দিয়েছেন। ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান তার পরিষদের প্যাডে কলেজ ছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার নিরহ কৃষক বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে চলতি মাসের ৫ তারিখ প্রতিবেদন দিয়েছেন। জানা যায়, ওই ছাত্রীকে প্রায়ই উত্যক্ত করত সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে জুয়েল রানা। বিয়ের প্রস্তাবও দেয় কিন্তু ছেলের স্বভাব চরিত্র ভালো না থাকার কারণে মেয়ের বাবা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে লম্পট জুয়েল রানা। জুয়েল রানা ১২ ই জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধুবরিয়া বাচ্চু মিয়ার ব্রীজের সামনে থেকে বন্ধুদের সহযোগিতায় ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। জুয়েল রানা কলেজ ছাত্রীকে তার আত্মীয় বাড়ীতে তিনদিন আটক রাখে। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে তার বাবা মা কে ঘটনাটি জানায়। পরে ধুবড়িয়া গ্রামের মাতাব্বদের ধর্ষনের বিষয়টি অবগত করেন। এ নিয়ে ওই গ্রামের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মাতাব্বররা বিভিন্ন সময়ে তালবাহানা ও সময়ক্ষেপন করে আসেন। ফলে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল টাঙ্গাইল আদালতে ৫জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা হলেন সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে মো. জুয়েল রানা, ধুবড়িয়া গ্রামের হায়েদ আলীর ছেলে মো. শিপন, মো. রিপন, উফাজ ও একই গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ মিয়া। পরে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তারা বাদীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দেয়া হয়। মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর আসামীরা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে। আসামিরা ধুবড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে ধর্ষণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। ওই ছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে আসামীদের পক্ষে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। সিআইডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ মামলার কলেজ ছাত্রীর বাবা একজন হত দরিদ্র কৃষক। তি নি দিন মজুরের কাজ করেন এবং এক প্রবাসীর বাড়িতে স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান নিয়ে দূর্বিষহভাবে বসবাস করে আসছেন। ওই ছাত্রী মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরে এক কলেজে লেখাপড়া করে আসছে। ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঐ ছাত্রীর সঙ্গে জুয়েল রানার পরিচয় হয়। জুয়েল এ ছাত্রীকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে জুয়েল তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা ঐ কৃষকের পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার কোন অভিযোগ পাননি। এবিষয়ে কলেজ ছাত্রীর বাবা জানান, চেয়ারম্যান আমার পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে গ্রাম থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি। এ ব্যাপারে ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, আমি চেয়ারম্যান আমি দিতে পারি তাই দিয়েছি। ছাত্রীর বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন মামলা আছে কি না আমি জানিনা। এলাকার লোকজন বলেছে তাই আমি এ প্রতিবেদন দিয়েছি। নাগরপুর থানার ওসি আলম চাঁদ জানান, চেয়ারম্যান কলেজ ছাত্রীর বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সঠিক নয়। এ পরিবারের নামে মাদক ও দেহ ব্যবসার বিষয়ে এলাকায় ও থানায় কোন অভিযোগ নেই। এ মামলার আসামীরা মেয়ের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকী প্রদান করে আসছে।